গ্রেটা থুনবার্গসহ মানবাধিকারকর্মীদের বহনকারী ‘ম্যাডলিন’ আটক, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অপহরণের’ অভিযোগ
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উদ্দেশ্যে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া মানবাধিকারকর্মীদের বহনকারী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’-কে আটক করেছে। আন্তর্জাতিক জলসীমায় অভিযান চালিয়ে সুইডেনের পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন কর্মীকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জাহাজটি ইতালি থেকে ছেড়ে এসে গত রবিবার গাজার উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তবে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রবেশ করে জাহাজটিকে আটক করে আশদোদ বন্দরের দিকে নিয়ে যায়। জাহাজ দখলের আগে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, “আমার নাম গ্রেটা থুনবার্গ, আমি সুইডেন থেকে এসেছি। আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের আটক করা হয়েছে। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী কিংবা ইসরায়েলকে সমর্থন জোগানো বাহিনী আমাদের অপহরণ করেছে।”
ভিডিও বার্তায় গ্রেটা তার বন্ধু, পরিবার ও সহকর্মীদের অনুরোধ করেন, সুইডিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেন তাদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজে অভিযান চালানো হতে পারে এমন আশঙ্কায় ভিডিওটি পূর্বেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল।
‘ম্যাডলিন’ জাহাজটি পরিচালিত হচ্ছিল অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (FFC) তত্ত্বাবধানে। এতে থাকা সহায়তার মধ্যে ছিল চিকিৎসা সরঞ্জাম, শিশুদের দুধ, চাল, ময়দা, ডায়াপার, স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, হুইলচেয়ার ও কৃত্রিম অঙ্গ।
গ্রেটা থুনবার্গ ছাড়াও জাহাজটিতে ছিলেন রিমা হাসান, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (ফ্রান্স), ইয়াসেমিন আচার (জার্মানি).থিয়াগো আভিলা (ব্রাজিল).ওমর ফায়াদ, ব্যাপতিস্ত আন্দ্রে, পাস্কাল মৌরিয়েরাস, রিভা ভিয়া (ফ্রান্স).সুলাইব ওর্দু (তুরস্ক).সার্জিও তোরিবিও (স্পেন).মার্কো ফন রেনেস (নেদারল্যান্ডস) এবং ইয়ানিস মোহামদি (ফ্রান্স) ।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “‘সেলফি ইয়ট’ ও তথাকথিত ‘সেলিব্রিটিদের’ নিরাপদে আশদোদ বন্দরে আনা হচ্ছে।”
তাদের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক পরিসরে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে মানবিক সহায়তার প্রতি অবমাননাকর ও নিন্দনীয় আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, জাহাজ দখলের পর থেকে সেখানে থাকা সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা যায়, জাহাজে থাকা কর্মীরা হাত উঁচু করে ডেকে বসে আছেন, যা শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের ইঙ্গিত বহন করে।
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো গাজার জনসাধারণের জন্য সরাসরি সহায়তা পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই মানবিক মিশনের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে অভিযোগ তুলছেন বিশ্লেষকেরা।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?