আংটিতে দুই হাজার বছরের হারানো কিশোরীর গল্প

জেরুজালেমের প্রাচীন শহরের মাটির নিচে মিলল একটি ছোট্ট স্বর্ণের আংটি—যেন দুই হাজার বছরের এক কিশোরীর গোপন স্বপ্ন চুপচাপ শুয়ে ছিল সেখানে। সিটি অব ডেভিড এলাকায় খননের সময় পাওয়া এই আংটির গায়ে খচিত রয়েছে একটি লাল রত্ন, যার দীপ্তি ছড়িয়ে দিয়েছে ইতিহাসের নতুন আলো।

গবেষকদের বিশ্বাস, প্রায় ২,৩০০ বছর আগের হেলেনিস্টিক যুগের এই আংটিটি ইচ্ছাকৃতভাবে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তার পাশেই মিলেছে আরও অলঙ্কার— স্বর্ণের পুঁতি, ব্রোঞ্জের দুল এবং একটি শিংওয়ালা প্রাণীর অবয়ব। ধারণা করা হচ্ছে, ওই স্থানে এক সময় বসবাস করত কোনো অভিজাত পরিবার।

আংটিটি প্রথমে আধুনিক গহনা ভেবে ভুল করেছিলেন এক খননকর্মী। কিন্তু পরে তার সূক্ষ্ম নকশা দেখে খোলাসা হয় এর প্রাচীনতা। আগেও এই এলাকায় আরেকটি প্রাচীন আংটি পাওয়া গিয়েছিল, যা গবেষণাকে নতুন মাত্রা দেয়।

বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের খনন ব্যবস্থাপক এফরাত বোখার বলেন, “জেরুজালেমে এত সূক্ষ্ম কারুকার্যের স্বর্ণালংকার খুবই বিরল। এটি শুধু অলঙ্কার নয়, এক কিশোরীর জীবনের নিঃশব্দ গল্প।”

গবেষকদের মতে, সেই সময়ে একটি রীতি ছিল—কিশোরীরা যৌবনে পা রাখার আগমুহূর্তে তাদের প্রিয় অলঙ্কার মাটিতে পুঁতে রাখতেন, যেন স্মৃতির এক নিঃশব্দ চিহ্ন। হয়তো এই আংটিটিও ছিল তেমনই কোনো বিশেষ মুহূর্তের উপহার বা প্রতীক।

এই আবিষ্কার শুধু অলঙ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পাশে পাওয়া গেছে পশুর হাড়, মুদ্রা ও মৃৎপাত্র, যেগুলো বিশ্লেষণ করে ঐ সময়কার খাদ্যাভ্যাস ও ধর্মীয় রীতিনীতির (যেমন ইহুদি কাশরুত বিধি) বিষয়ে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছেন গবেষকেরা।

জেরুজালেমের সংস্কৃতি নিয়ে আগে ধারণা ছিল, এটি বাইরের প্রভাব থেকে ছিল অনেকটা মুক্ত। তবে এই আবিষ্কৃত অলঙ্কারগুলো সে ধারণা পাল্টে দিচ্ছে।

একটি ছোট্ট সোনার আংটি—হয়তো ভালোবেসে দেওয়া হয়েছিল, হয়তো হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেটি হয়ে উঠেছে ইতিহাসের এক নীরব ও জীবন্ত সাক্ষী।