অ্যাপার্টমেন্ট ও ভবন নির্মাণে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ শেষ পর্যন্ত বাতিল হতে পারে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই সুবিধা কর বৃদ্ধি করে অব্যাহত রাখার প্রস্তাব থাকলেও, সরকারের পক্ষ থেকে এখন তা পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সুপারিশে এই অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক সুবিধা বাতিলের দিকেই যাচ্ছে সরকার।
সূত্র জানায়, সোমবার সকালে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুপুরে আবাসন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠন রিহ্যাবের একটি প্রতিনিধি দল কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। যদিও কিছু দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তবে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বাতিলের আভাসও পাওয়া গেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান সমকালকে জানান, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। রিহ্যাবের পক্ষ থেকে এ সুযোগ অব্যাহত রাখার জোর দাবি জানানো হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সার্বিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে।
রিহ্যাবের দাবি, অর্থনৈতিক মন্দায় আবাসন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ হলে টাকাগুলো বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। এ ছাড়া তারা নিবন্ধন ব্যয় ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা, মূলধনী মুনাফায় কর কমিয়ে ৪ শতাংশ করার দাবি এবং রড, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর ওপর অতিরিক্ত কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়।
বর্তমানে ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে ২০০ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটে কালো টাকা বিনিয়োগ করতে চাইলে প্রতি বর্গমিটারে কর দিতে হয় ৬ হাজার টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটের জন্য ৪ হাজার টাকা। অন্যান্য এলাকায় করের হার আরও কম। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে এই করহার প্রায় পাঁচ গুণ বাড়ানো এবং কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে অপরাধজনিত ও অবৈধ উৎস থেকে আসা অর্থ নিষিদ্ধ করার শর্ত রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটের বিরুদ্ধে সিপিডি ও টিআইবি তীব্র সমালোচনা করেছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এই সুযোগ সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে এবং বৈষম্য তৈরি করবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান একে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেন।
চূড়ান্ত বাজেট অনুমোদনের আগে ২২ জুন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই প্রস্তাব বাতিল বা বহাল রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?