‘পেপে’ নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকা আর নেই। ৮৯ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে সাদামাটা জীবনযাপনকারী এই রাজনীতিক। বুধবার (১৩ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হোসে মুজিকা। গেরিলা আন্দোলন থেকে উঠে আসা এই নেতা তার অনাড়ম্বর জীবনধারার কারণে পরিচিতি পান ‘বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’ নামে। নিজের সরকারি বাসভবনে না থেকে গ্রামে নিজ বাড়িতেই থাকতেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা গ্রহণ করতেন না, পুরোনো একটি গাড়ি চালিয়ে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম সারতেন।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওরসি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, “আপনি আমাদের যা কিছু দিয়েছেন এবং জনগণের জন্য যা করেছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা। আপনাকে ধন্যবাদ।”
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মুজিকা দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তবে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
সাধারণ জীবনযাপন, ভোগবাদবিরোধী অবস্থান ও বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হোসে মুজিকা শুধু উরুগুয়ে নয়, গোটা লাতিন আমেরিকায় এক অনন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ৩৪ লাখ জনসংখ্যার একটি ছোট দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচিত ও জনপ্রিয়।
একসময় তিনি বলেছিলেন, “রাজনীতির পাশাপাশি আমি বই পড়তে ভালোবাসি, জমিতে কাজ করতে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা পেয়েছি আমার মায়ের কাছ থেকে।” উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা।
তরুণ বয়সে মুজিকা ছিলেন দেশটির ঐতিহ্যবাহী ন্যাশনাল পার্টির সদস্য। তবে ১৯৬০-এর দশকে তিনি তাত্ত্বিকভাবে কিউবান বিপ্লব ও সমাজতন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে গঠন করেন বামপন্থী গেরিলা সংগঠন ‘টুপামারোস ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট’ (MLN-T)। এ সংগঠনটি হামলা, অপহরণ ও শাস্তি কার্যকরের মতো সশস্ত্র কার্যক্রমে যুক্ত ছিল। যদিও মুজিকা বারবার বলেছেন, তিনি কখনো কোনো হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না।
এই সময়ের মধ্যে চারবার গ্রেপ্তার হন মুজিকা। ১৯৭০ সালে এক অভিযানে তাকে ছয়বার গুলি করা হয়, তবে সেবার অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান। দুইবার কারাগার থেকেও পালিয়ে যান তিনি, এর মধ্যে একবার ১০৫ বন্দীর সঙ্গে একটি সুড়ঙ্গপথে পালিয়ে ইতিহাস গড়েন।
১৯৭৩ সালে উরুগুয়ের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তাকে ‘নয়জন জিম্মি’ দলের অংশ হিসেবে বন্দি রাখা হয়। ১৪ বছরেরও বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন, বেশিরভাগ সময় নির্জন কারাকক্ষে কাটাতে হয় তাকে। ১৯৮৫ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর তিনি মুক্তি পান।
মুক্তির পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন মুজিকা। পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের অনন্য জীবনদর্শন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আদর্শনিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?