মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিক রপ্তানি বহু বছর ধরেই দুর্নীতির গহ্বরে আটকে আছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী, সুবিধাবাদী আমলা এবং কিছু পেশাদার প্রতারক একাট্টা হয়ে শ্রমবাজারকে নিজেদের লুটপাটের ক্ষেত্র বানিয়েছে। যখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শ্রম বাজারে পুনরায় কর্মী প্রেরণের আলোচনা চলছে, তখন পুরনো কায়দায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সিন্ডিকেট গঠনের অপচেষ্টা আবারও সক্রিয়ভাবে দৃশ্যমান। এই সিন্ডিকেট শুধু লেনদেন বা ক্ষমতার খেলা নয়—এটা একপ্রকার মানবপাচার। অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানো, অবৈধভাবে মেডিকেল ও ভিসার প্রক্রিয়া চালানো, এবং একবার বিদেশে পৌঁছানোর পর তাদের শোষণের জন্য উন্মুক্ত রেখে দেওয়া—এসবই আন্তর্জাতিক মানবপাচার আইনে অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হওয়া উচিত। অথচ মূলহোতারা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রায় হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়ার তথ্য এসেছে ‘একটি উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ’ নামের শ্বেতপত্রে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি গত বছর দেশের অর্থনীতি নিয়ে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, সেখানে এটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠিয়ে ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির চক্র দেড় বছরেই হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। প্রায় পৌনে ৫ লাখ কর্মীর কাছ থেকে অতিরিক্ত এই অর্থ নিয়ে নিজেদের পকেটে ভরেছে চক্রটি। চাহিদার বেশি কর্মী পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের চার সংসদ সদস্যের নামও এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে সাবেক চার এমপির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি আ হ ম মুস্তফা কামাল, নিজাম উদ্দিন হাজারী, বেনজীর আহমেদ এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। প্রথম তিনজন আওয়ামী লীগের এবং মাসুদ উদ্দিন জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন।
দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জন্য বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। সেই সময় ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো যেতো। এরপর ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বরে নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খুলতে সময় লেগেছিল ৩ বছর। ২০২২ সালের আগস্টে আবারও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। তখন প্রথমে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া হলেও পরে তা বাড়িয়ে ১০১টি করা হয়। ২০২৪ সালের ৩১ মে থেকে আবারও কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার চুক্তি করতে হবে। ২০২২ সালে শ্রমবাজার খোলার পর গিয়েছিলেন ৫০ হাজার ৯০ জন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জনে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে যান ৯৩ হাজার ৬৩২ জন। আর চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গেছেন ১ হাজার ৫৮৭ জন।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) একাধিক সদস্যের অভিযোগ, রাঘববোয়ালদের চক্রের কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীরা নানা সমস্যায় পড়ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বায়রার এক সদস্য বলেন, শ্রমিকদের বিদেশ যেতে সরকার ৮০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে জনপ্রতি সাড়ে ৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। যেখানে ৫০ জনের কাজের জায়গা রয়েছে, সেখানে ৫০০ লোক নিয়েছে। ফলে সেখানে গিয়ে শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
এদিকে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটে জড়িতদের ‘কালো তালিকা’ করার ঘোষণাও দিয়েছিল সেদেশের সরকার। সরকারি কর্মকর্তা, এজেন্ট এবং যেসব কোম্পানির মালিক এসব অবৈধ কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতেও উদ্যোগ নেয় মালয়েশিয়া। ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর, কুয়ালালামপুরে অভিবাসী শ্রমিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১২তম যৌথ কমিটির বৈঠক শেষে মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম এ কথা বলেন। সে সময় মালয়েশিয়া কিনির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কোম্পানির মালিক প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও অভিবাসী শ্রমিকের জন্য কোটা সংগ্রহ করে কয়েক মিলিয়ন রিঙ্গিত উপার্জন করেছে। আর এসব সিন্ডিকেটে সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত। যদি কারো কাছে সিন্ডিকেট পরিচালনার তথ্য থাকে, তবে মন্ত্রণালয়ে জানানোর জন্যও সে সময় মানবসম্পদমন্ত্রী বলেছিলেন। তথ্য প্রমাণিত হলে, সেই কোম্পানির মালিক এবং ঘটনায় জড়িতদের স্থায়ীভাবে কালো তালিকা করা হবে।
মালয়েশিয়া কিনির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সাল থেকে এই সিন্ডিকেটটি সক্রিয় রয়েছে এবং আংশিক কিছু আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তার যোগসাজশের কারণে এটি দমন করা সম্ভব হয়নি। সিন্ডিকেটটির উদ্দেশ্য কোটা বিক্রি এবং শ্রমিকদের অস্থায়ী কর্মসংস্থান ভিজিট পাস (পিএলকেএস) রিনিউ করে প্রতি বছর অবৈধভাবে লাখ লাখ রিঙ্গিত আয় করে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) এর সাবেক যুগ্ম সচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, সাবেক সরকারের আমলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট হয়েছিল। প্রথমে ১০ জন, তারপর ২৫ জন এবং পরে ১০০ জনের সিন্ডিকেট করা হয়। এই সিন্ডিকেটচক্র বাংলাদেশ থেকে যত কর্মী গেছেন প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের একটা পদ্ধতি ছিল অনলাইন সিস্টেম। যেখানে প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে ৫ হাজার রিঙ্গিত সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে। এভাবে তারা ১২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই সিন্ডিকেট ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করার জন্য পাঁয়তারা করছে। সাবেক সরকারের এমপি, মন্ত্রী, নেতা ও বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সরকারের উচিত, নতুন করে সিন্ডিকেট করতে চাইলে তা ভেঙে দেওয়া। একই সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে এজেন্সিগুলোকে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
সিন্ডিকেট এড়াতে বিদ্যমান শ্রম চুক্তির কয়েকটি ধারা সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা কর্মী অ্যান্ডি হল। সম্প্রতি অ্যান্ডি হল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ২০২১ সালের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) আমূল পরিবর্তন করা দরকার এবং নেপালের সঙ্গে এখন মেয়াদোত্তীর্ণ সমঝোতা স্মারকটিও আপডেট করা দরকার। তার মতে, চুক্তির কয়েকটি ধারা অপসারণ করা দরকার, এই ধারাগুলো সিন্ডিকেটের হাতে নিয়ন্ত্রণ দেয়, কারা কর্মী পাঠাতে পারবে তা সীমাবদ্ধ করে, অভিবাসন ব্যয় বাড়িয়ে তোলে এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করে। হল বলেন, নেপালের সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সমঝোতা স্মারক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ সমঝোতা স্মারক সতর্কতার সঙ্গে সংশোধন করে সমস্যাযুক্ত ধারাগুলো দূর করতে হবে, যেন অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাকে কথিত সিন্ডিকেট থেকে চিরতরে মুক্তি দেওয়া যায়। দায়িত্বজ্ঞানহীন, অনিয়মিত ও অনৈতিক নিয়োগ এবং এ ধরনের আচরণের জন্য অসদাচরণ, ঋণের দাসত্ব ও অন্যান্য নির্যাতনের ফলে অনেক শ্রমিকের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও নেপাল সরকারকে অবশ্যই সিন্ডিকেশনের যে কোনো সুযোগ অপসারণ করতে এবং শ্রমবাজার পুনরায় খোলার আগে আরও দায়িত্বশীল নিয়োগ অনুশীলনের সম্ভাবনা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক পুনর্বিবেচনা করতে দ্রুত কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডাব্লিউসিএমএস)-এর চুক্তি অব্যাহত রাখার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন তিনি।
সমালোচকরা বলছেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সিন্ডিকেশন প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমেই অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপালের অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা এখনও অন্যান্য উৎস দেশগুলোর পাশাপাশি আপডেট হওয়া এফডাব্লিউসিএমএস ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেটের শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য চলমান আলোচনা এই দেশগুলোর জন্য অংশগ্রহণকারীদের তালিকাভুক্ত করতে বিলম্ব করেছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের কম বেতন
মালয়েশিয়ায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও বাংলাদেশি শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা যেখানে ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য মাসে কমপক্ষে ৩ হাজার মালয়েশীয় রিঙ্গিত বেতন পান, সেখানে বাংলাদেশিদের ১২ ঘণ্টা কাজ করেও সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত রোজগার করতে হয়। এমন বৈষম্যের প্রধান কারণ হিসেবে শ্রমিকদের ‘অদক্ষতা ও অবৈধভাবে’ বিদেশে পাড়ি দেওয়াকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৫ লাখেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধভাবে আসা শ্রমিক এবং দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণেই বাংলাদেশিরা কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কুয়ালালামপুরের একটি রেস্টুরেন্টে কর্মরত নেত্রকোনার ইমামুল জানান, বেশিরভাগ বাংলাদেশি শ্রমিকই অদক্ষ। ফলে তারা অন্য দেশের শ্রমিকদের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন এবং কম বেতন পান। একই কথা জানান কুয়ালালামপুরের অন্য একটি রেস্তোরাঁয় কর্মরত মো. জাকির হোসেন। কলিং ভিসায় এসে কোম্পানি কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় তিনি অবৈধ অভিবাসী হয়ে সস্তা বেতনে কাজ করছেন।
সেলাঙ্গরের একটি দোকানে কর্মরত যশোরের রাজু বলেন, বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করলেও তাদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম। তবে দোকানে কর্মরত শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় আছেন। সেলাঙ্গরের নির্মাণ শ্রমিক মানিক জানান, অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় আসার কারণে তারা কম বেতন পাচ্ছেন।
তবে মালয়েশিয়ার একজন নাগরিকের মতে, বাংলাদেশিরা অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং তাদের অধিকাংশই ভালো। সমস্যা হলো, তারা ইংরেজি তেমন জানেন না। ফলে ভালো পদে চাকরি পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে, অনেককেই কম বেতনে বেশি সময় ধরে কাজ করতে হয়।
অধিকার আদায়ে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ
শ্রমিক দিবসে অধিকার আদায়ে পুত্রজায়ায় মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (কেমুসা) সামনে মালয়েশিয়া ব্যাংক কর্মচারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
‘কণ্ঠহীনদের কণ্ঠস্বর’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব ব্যাংক এমপ্লয়িজ গত ১ মে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশের মূল দাবি ছিল ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার পুনরুদ্ধার করা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জে. সলোমন বলেন, মানবসম্পদমন্ত্রী কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
জানা গেছে, নিয়োগকর্তারা আলোচনা সভা না করা সত্ত্বেও ২০তম যৌথ চুক্তিটি শিল্প আদালতে পাঠিয়ে উৎসব ভাতা বন্ধ করা হয়। কর্মক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগও মন্ত্রী উপেক্ষা করেছেন। এ ধরনের বৈষম্যমূলক হস্তক্ষেপ শ্রমিক সুরক্ষার প্রতি উদ্বেগজনক এবং তাদের সদস্যদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নগুলোর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা প্রদর্শন করে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সব শ্রমিক এবং জনসাধারণকে এই আন্দোলনকে সমর্থন করার এবং মালয়েশিয়ায় মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং ট্রেড ইউনিয়ন স্বাধীনতার জন্য সংহতি প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছে।
কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট চান না বায়রার সদস্যরা
মালয়েশিয়া সরকারের সকল শর্ত মেনে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে যে কোনো মূল্যে শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অন্য ১৩টি দেশ মালয়েশিয়া সরকারের শর্ত মেনে নিয়ে তাদের শ্রমবাজার চালু রাখলেও বাংলাদেশে এক্ষেত্রে অনেকখানি পিছিয়ে আছে। ফলে কয়েক লাখ কর্মীর যে চাহিদা মালয়েশিয়ার রয়েছে সেই বাজার বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হারাবে কয়েক বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বন্ধ শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার দাবিতে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে ইস্কাটন গার্ডেনে প্রবাসী কল্যাণ ভবন প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করা হয়। এছাড়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করতে ২১ এপ্রিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়ার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জনশক্তি রফতানিকারকদের একাংশ। ৪৫৩টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি জমা দেন বায়রার নেতারা। স্মারকলিপিতে কর্মী প্রেরণে কম খরচের একটি বিকল্প উপায়ও তুলে ধরা হয়। সরকারিভাবে বিএমইটির মাধ্যমে আগ্রহী কর্মীদের ডেটাবেজ তৈরি এবং সেই ডেটাবেজ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক কর্মী সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্মী সরকার নির্ধারিত খরচ ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেবেন এবং পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বিএমইটি তত্ত্বাবধান করবে।
gvj‡qwkqvq Kg©x cvVv‡Z bv cvivi `vq G‡Rwݸ‡jvi
Rbkw³ Kg©ms¯’vb I cÖwk¶Y ey¨‡iv (weGgBwU) †_‡K ewnM©gb QvocÎ †bIqvi ciI MZ eQi 17 nvRvi 777 Rb Kg©x‡K gvj‡qwkqvq cvVv‡Z bv cvivi `vq wiµzwUs G‡Rwݸ‡jvi| nvB‡Kv‡U© `vwLj Kiv cÖevmx Kj¨vY I ˆe‡`wkK Kg©ms¯’vb gš¿Yvj‡qi MwVZ Z`šÍ KwgwUi cÖwZ‡e`‡b G K_v ejv n‡q‡Q| MZ 27 GwcÖj wePvicwZ dvnwg`v Kv‡`i I wePvicwZ gywebv Avmv‡di nvB‡KvU© †e‡Â cÖwZ‡e`bwU Dc¯’vcb Kiv nq| cÖwZ‡e`‡bi Ô`vq`vwqZ¡ wba©viYÕ As‡k ejv n‡q‡Q, Ôˆe‡`wkK Kg©ms¯’vb I Awfevmx AvBb, 2013 (ms‡kvwaZ) Gi 15 (K) avivi AvIZvq cÖYxZ wewagvjv †gvZv‡eK weGgBwU †_‡K Awfevmx Kg©xi ewnM©gb QvocÎ msMÖn Kiv, Awfevmx Kg©x‡K K‡g© wb‡qv‡Mi e¨e¯’v Kiv Ges Zvi Kg©cwi‡ekmn Ab¨ my‡hvMmyweav wbwðZ Kiv m¤ú~Y©fv‡e wiµzwUs G‡RwÝi `vwqZ¡| weGgBwU †_‡K QvocÎ msMÖn Kivi ciI 17 nvRvi 777 Rb Kg©x‡K gvj‡qwkqvq cvVv‡Z bv cvivi `vq`vwqZ¡ m¤ú~Y©iƒ‡c mswkøó wiµzwUs G‡Rwݸ‡jvi Ici eZ©vq|
G‡Z Av‡iv ejv nq, Kg©x cvVv‡bvi e¨_©Zvi Rb¨ wiµywUs G‡Rwݸ‡jv †kl gyn~‡Z© wegv‡bi wUwKU bv cvIqv‡K g~j KviY ej‡jI ch©v‡jvPbv K‡i †`Lv †M‡Q, Kg©x cvVv‡bvi †¶‡Î wiµzwUs G‡Rwݸ‡jv AhvwPZ wej¤^ K‡i‡Q| wej¤^ bv Ki‡j †kl gyn~‡Z© G ai‡bi AbvKvw•¶Z cwiw¯’wZi m„wó n‡Zv bv| G †¶‡Î wiµzwUs G‡Rwݸ‡jvi `vwqZ¡nxbZvB `vqx Ges Zv‡`i †Kv‡bv ARynvZ MÖnY‡hvM¨ bq|
Kg©x cvVv‡bvi e¨_©Zv Ges `vwq‡Z¡ Ae‡njvi Rb¨ mswkøó wiµzwUs G‡Rwݸ‡jvi weiæ‡× AvBbvbyM e¨e¯’v †bIqv Ges gvj‡qwkqv †h‡Z bv cviv e¨w³‡`i KvQ †_‡K †bIqv UvKv Awej‡¤^ †diZ †`Iqvmn QqwU mycvwik Kiv n‡q‡Q cÖwZ‡e`‡b|
fwel¨‡Z hv‡Z G ai‡bi cwiw¯’wZi Avi m„wó bv nq, †m mycvwikI Kiv n‡q‡Q| cÖwZ‡e`‡bi GB As‡k ejv n‡q‡Q, gvj‡qwkqv miKv‡ii m‡½ ¯^v¶wiZ mg‡SvZv ¯§viK Abymv‡i wiµzwUs G‡RwÝ wbe©vP‡bi weavb ms‡kva‡bi D‡`¨vM wb‡Z n‡e, hv‡Z ˆea me wiµzwUs G‡RwÝ gvj‡qwkqvq Kg©x cvVv‡bvi my‡hvM cvq| gvj‡qwkqvmn wewfbœ †`‡k Kg©x cvVv‡bvi †¶‡Î †K›`ªxq e¨e¯’vcbv Pvjy Ki‡Z n‡e, hv‡Z we‡`‡k cvVv‡bvi ci Kg©x‡`i cieZ©x cwiw¯’wZ Z`viwK Kiv hvq| G Qvov gš¿Yvjq †_‡K Kg©x‡`i wb‡qvM AbygwZ †bIqvi ci weGgBwU †_‡K QvocÎ †bIqv, Kg©x cvVv‡bvi mgqmxgv wbw`©ó Kiv, Awfevmx Kg©x‡`i KvQ †_‡K Awfevmb e¨q MÖn‡Yi †¶‡Î ¯^”QZv wbwðZ Kivi mycvwikI Kiv n‡q‡Q G‡Z|
Av‡`‡ki ci wiUKvix AvBbRxex †gv. Zvbfxi Avn‡g` e‡jb, cÖwZ‡e`‡bi wfwˇZ mswkøó wiµzwUs G‡Rwݸ‡jvi weiæ‡× Kx e¨e¯’v †bIqv n‡q‡Q, fz³‡fvMx‡`i KvQ †_‡K †bIqv UvKv †diZ †`Iqv n‡q‡Q wK bv Ges Zv‡`i gvj‡qwkqvq cvVv‡bvi e¨cv‡i †Kv‡bv D‡`¨vM †bIqv n‡q‡Q wK bvÑGme welq Zz‡j a‡i ivóªc¶‡K cÖwZ‡e`b w`‡Z e‡j‡Qb Av`vjZ| G wel‡q AvMvgx 27 AvM÷ n‡q‡Q e‡j Rvbvb cieZ©x Av‡`‡ki w`b avh©¨ Kiv n‡q‡Q|
জনশক্তি রফতানিকারকরা জানান, সিন্ডিকেট ভাঙা গেলে মালয়েশিয়ায় মাত্র দেড় লাখ টাকায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব। কিন্তু সিন্ডিকেট নিয়ে গত এক দশক ধরে এত বড় কেলেঙ্কারি হবার পর এখনও সেটা ভাঙা সম্ভব হয়নি। বায়রার বহিষ্কৃত কিছু নেতা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ধ্বংসের মিশনে নেমেছেন এবং গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে অভিবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। তাদের এই ধরনের কার্যকলাপের কারণে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের পরিবর্তে অন্য দেশ বেছে নিতে পারে, যা বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান সংকুচিত করবে।
গ্লোবাল লেবার অর্গানাইজেশন (জিএলও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রধান ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং পশ্চিমা বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকারের অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে এশিয়ান গন্তব্যগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দুর্ভাগ্যজনক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। স্থায়ী শ্রমিক সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা শুধু অপব্যবহার রোধ নয়, শ্রম অধিকারের সমন্বয়ের জন্যও অপরিহার্য।
এদিকে, মালয়েশিয়ার ‘দি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি’ (পিএসি) এই সিন্ডিকেটের প্রধান হাতিয়ার বেস্টিনেটের ‘এফডাব্লিউসিএমএস’ সিস্টেমের স্বীকৃতিপত্র (এলওএ) ইস্যু করার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। মালয়েশিয়ার ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, এফডাব্লিউসিএমএস -এর কারণে ভিসা নবায়নেও অতিরিক্ত অর্থ ও সময় লাগছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ইস্যুতে আগামী ১৫ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদ মন্ত্রীর মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ২২ ও ২৩ মে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাও অনুষ্ঠিত হবে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এই বৈঠককে সামনে রেখে একটি উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে। তারা মনে করে, সিন্ডিকেট ভাঙলে কর্মীরা কম খরচে বিদেশ যেতে পারবে এবং সকল বৈধ এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে।
মালয়েশিয়ার কয়েকজন ব্যবসায়ী বিএমইটির তত্ত্বাবধানে একটি ডেটা ব্যাংক তৈরির সুপারিশ করেছেন, যেখান থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী সংগ্রহ করতে পারবে। মেডিকেল ও ভিসার খরচ ধাপে ধাপে বিএমইটির মাধ্যমে পরিশোধ হলে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সুযোগ থাকবে না এবং দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যেই কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নানা সিন্ডিকেট ও দালালদের কারণে বিশ্ব শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার তো এখন বন্ধই। তাই বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও দালালমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের অধিকার আদায়ে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। তবে মূল সমস্যা রয়েই গেছে। তাই সবার আগে প্রয়োজন এই খাত দালালমুক্ত করা।
এদিকে ভোগান্তি কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও সরকারিভাবে খুব বেশি মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গেছেন মাত্র ৩.০৪ শতাংশ মানুষ। আর দালালের বাইরে বেসরকারি কোম্পানি বা এজেন্সিগুলোকে টাকা দিয়ে বিদেশে গেছে ৪২.০৯ শতাংশ। অন্যান্যভাবে বিদেশ গেছে ২.৮০ শতাংশ। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা। শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালদের সম্পৃক্ততা দরিদ্র কর্মীদের খরচ বাড়িয়ে দেয়। বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, ৫৮.২৪ শতাংশ মানুষ বিদেশ যেতে ঋণের ওপর নির্ভর করেন। শহরের ৫১.৮৩ শতাংশ ও গ্রামের ৬০.০৭ শতাংশ মানুষ ঋণ নিয়েছেন। নারীদের (৩৭.৯৮ শতাংশ) তুলনায় পুরুষরা (৫৮.৭৪ শতাংশ) বেশি ঋণ নেন। এদিকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পাশাপাশি স্থায়ীভাবে ফেরতও আসছেন অনেকে। মালয়েশিয়া থেকে ১৩.১৫ শতাংশ দেশে ফেরত এসেছেন বলে বিবিএসের তথ্যে জানা গেছে।
শ্রমিক রপ্তানি কোনো প্রাইভেট ব্যবসা নয়, এটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত দায়িত্ব। শ্রমিক হিসাবে যারা ভাগ্যান্বেষণে প্রবাসে পাড়ি জমান, তাদের অধিকাংশই দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশ। এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশকে এগিয়ে দিচ্ছে। তারা স্বপ্ন দেখে বৈধভাবে বিদেশে কাজ করে পরিবারের ভাগ্য ফেরানোর। কিন্তু কয়েকজন দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতাধর ব্যক্তি সেই স্বপ্ন লুটে নিচ্ছে দিনের পর দিন। হাজার হাজার শ্রমিক এবং তাদের পরিবার আজ এই দুর্নীতির শিকার। অবিলম্বে সরকারের এদিকে নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুরা যেন কোনোভাবেই প্রতারণার শিকার না হন, তা-ও নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?