ইন্দাস নদীর ওপর ছয়টি নতুন খাল নির্মাণের পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। প্রকল্প বাতিল না হলে সরকারের পতন ঘটাতে প্রস্তুত—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী এবং পিপিপি নেতা মুরাদ আলী শাহ।
জিও নিউজের জনপ্রিয় টক শো ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ক্ষমতা আছে—আমরা চাইলে এই সরকারকে ফেলে দিতে পারি। কিন্তু আমরা কোনো অস্থিরতা চাই না। আমাদের এমন পথে ঠেলে দেবেন না, যাতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চোলিস্তানে ‘গ্রীন পাকিস্তান ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ। কৃষি উন্নয়ন ও চাষিদের জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ হলেও এই প্রকল্পের আওতায় ইন্দাস নদীতে ছয়টি নতুন খাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত সিন্ধুতে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
মার্চে সিন্ধু প্রাদেশিক পরিষদ সর্বসম্মতভাবে খাল নির্মাণের বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাস করে। পাশাপাশি গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (জিডিএ) ও জাতীয়তাবাদী দলগুলো করাচিসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করে।
মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ শাহ বলেন, “এই প্রকল্প বাতিল করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সিন্ধুর জনগণ আজ এক কণ্ঠে বলছে—এই খাল চাই না।”
তিনি জানান, এই ২৫০ বিলিয়ন রুপির প্রকল্পটি এখনো ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির (ECNEC) অনুমোদন পায়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “নতুন খালের জন্য পানি আসবে কোথা থেকে? সিন্ধু যেহেতু নিচের অংশে, তাদের সম্মতি ছাড়া কোনো পানি প্রকল্প আইনত করা যায় না।”
কেন্দ্রীয় সরকার ইন্দাস রিভার সিস্টেম অথরিটি (IRSA)-র অনুমোদন চেয়েছে, যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে যে ২৭% পানি সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। কিন্তু পানিসংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় তা চ্যালেঞ্জ করেছে সিন্ধু সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই ইস্যুটি ২০২৪ সালের জুন মাস থেকেই কাউন্সিল অব কমন ইন্টারেস্টস (CCI)-এর বিবেচনায় রয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে মুরাদ শাহ আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা মহাসড়ক বন্ধ না করে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি না করেন। তিনি বলেন, “আইনজীবী, জাতীয়তাবাদী সংগঠন—সবাই যেন মাঠে প্রতিবাদ করলেও জনদুর্ভোগ না বাড়ায়। আমরা আলোচনায় ব্যর্থ হলে আমরাও আন্দোলনে নামবো।”
গত সপ্তাহে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সতর্ক করে বলেন, খাল প্রকল্প বাতিল না হলে পিপিপি কেন্দ্রীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসবে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ সহকারী রানা সানাউল্লাহ বলেন, “এটি হয়তো জনসভায় দেওয়া আবেগপ্রবণ মন্তব্য। কিন্তু রাজনৈতিক শালীনতা রক্ষা করতে হবে।”
সিন্ধুর তথ্যমন্ত্রী শরজিল মেমন জানান, বারবার আপত্তি জানিয়েও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যথাযথ জবাব পাওয়া যায়নি। তবে তিনি জানান, “আলোচনার পথ এখনো খোলা আছে। সরকার চাইলে আমরা বসতে প্রস্তুত।”
‘সেভ ইন্দাস স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স’-এর উদ্যোগে করাচিতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়। এতে ‘করাচি বাঁচাও তহরীক’ ও জুলফিকার আলী ভুট্টো জুনিয়র-সহ অনেকে অংশ নেন। ফোয়ারা চৌকে সমবেত হয়ে তারা খাল প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।
বিশ্লেষকদের মতে, ইন্দাস নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সিন্ধুর অবস্থান যথার্থ। তবে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে সহানুভূতিশীল আলোচনার মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান হওয়া জরুরি।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?