কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে পাকিস্তান ভারতীয় মালিকানাধীন বা পরিচালিত সব এয়ারলাইনের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এর ফলে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যগামী আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর সময়সূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগো।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পৃথক দুটি বিবৃতিতে এ দুই বিমান সংস্থা জানিয়েছে, পাকিস্তানের আকাশ বন্ধ থাকায় তাদের একাধিক আন্তর্জাতিক রুটে বিকল্প দীর্ঘপথ গ্রহণ করতে হচ্ছে। ফলে ফ্লাইটের সময় বাড়বে, কিছু ক্ষেত্রে বিলম্ব এবং রিশিডিউলিং অনিবার্য হয়ে উঠছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার সতর্কতা
এয়ার ইন্ডিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার)–এ এক বার্তায় জানিয়েছে, “পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকার কারণে আমাদের কিছু ফ্লাইট উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিকল্প রুটে চালানো হচ্ছে। যাত্রীদের এই অপ্রত্যাশিত অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। যাত্রীদের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
ইন্ডিগোর অবস্থান
একই ধরনের বার্তায় ইন্ডিগো জানায়, “পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় আমাদের কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। আমরা যাত্রীদের অনুরোধ করছি ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করার জন্য এবং প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।”
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ভারতীয় পর্যটক এবং একজন নেপালি নাগরিক। হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি সংগঠন, যা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করছে ভারত।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের হুমকি এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ভারতের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে এবং ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করে।
আন্তর্জাতিক রুটে সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যমুখী ফ্লাইটগুলোকে এখন আরব সাগর, ইরান বা মধ্য এশিয়ার ওপর দিয়ে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে, যা রুটভেদে ফ্লাইটের সময় ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি যাত্রীসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিমান চলাচল বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারতীয় বিমান শিল্পে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে শুধু যাত্রীদের ভোগান্তিই নয়, কার্গো ফ্লাইট ও ব্যবসায়িক রুটগুলোর ওপরও চাপ বাড়বে।
পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন নয়, বরং এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে, যাত্রীসেবায় এবং বাণিজ্যিক চলাচলেও। কূটনৈতিক উত্তেজনার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে এই সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?