clock ,

পারমাণবিক উত্তেজনায় ভারত-পাকিস্তান? গোপন মার্কিন দলিলে মিলল সতর্ক বার্তা

পারমাণবিক উত্তেজনায় ভারত-পাকিস্তান? গোপন মার্কিন দলিলে মিলল সতর্ক বার্তা

সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ঠিক এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গোপন গোয়েন্দা দলিলের ভেতর থেকে একটি স্পেশাল ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এস্টিমেট (SNIE) প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে ভারত পাকিস্তানের মধ্যেঅযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া বা ভুল হিসাব-নিকাশপারমাণবিক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রকাশিত ওই গোপন মার্কিন প্রতিবেদনের সময়কাল ১৯৮০-এর দশক। এতে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা কম হলেও ‘miscalculation’ (ভুল বিচার-বিবেচনা) বা ‘irrational reaction’ (অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া) পরিস্থিতিকে ভয়ানক পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তান যদি কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা সংরক্ষণে সক্ষম হয়, তাহলে ভারত এক ধরণের pre-emptive strike বা প্রতিরোধমূলক হামলার কৌশল বিবেচনা করতে পারে, বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি যখন ভারতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে বিবেচিত হবে, তখন ভারত প্রথমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং এরপর প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রসঙ্গে ১৯৮১ সালের “Pakistan's Nuclear Developments and India's Response” শীর্ষক মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণেও একই রকম আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে গোপন ছিল এবং সম্প্রতি ডিক্লাসিফায়েড নথির অংশ হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি- একটি গবেষণায়, যেখানে বলা হয়, ভারত যদি করাচির পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে, তাহলে “catastrophic civilian casualties” বা গণহত্যার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

প্রতিবেদনগুলোতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের কাছে পরাজয়ের পর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো পারমাণবিক শক্তি অর্জনকে জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গিই পরবর্তীতে পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করে।

ভারতের কৌশলবিদেরা বরাবরই প্রথম আঘাত (first strike) নীতিতে দ্বিধান্বিত। কারণ, এতে পাকিস্তান তার নিজস্ব পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা আঘাত হানতে পারে। উভয় পক্ষের এই পারস্পরিক নিশ্চয়তাবোধ বা “Mutually Assured Destruction (MAD)”-এর ধারণা যুদ্ধকে রুখে রাখলেও, একটি ভুল সিদ্ধান্ত বা সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যুদ্ধকে পারমাণবিক রূপ দিতে পারেএমন শঙ্কাই প্রকাশ করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, পহেলগাম হামলার পর দুই দেশের মধ্যে যে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে পুরনো এই মার্কিন দলিল নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে যখন পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, আর ভারত পাল্টা চাপ বাড়াচ্ছে, তখন এমন একটি গোপন দলিলের প্রকাশ যুদ্ধ এবং কূটনৈতিক সমাধানের নতুন ভারসাম্য তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

ভারত পাকিস্তানদুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন নয়, তবে এমন স্পর্শকাতর সময়ে দীর্ঘদিন গোপন থাকা মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন সামনে আসা দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক অঙ্গনে একাধিক প্রশ্ন তুলছে।
এই মুহূর্তে প্রধান চ্যালেঞ্জদুই দেশ কীভাবেঅযৌক্তিক প্রতিক্রিয়াএড়িয়ে গিয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে, সেটাই নজরদারির বিষয়।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য