clock ,

মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে সরকার, কক্সবাজারে বৈঠক নির্ধারণ

মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে সরকার, কক্সবাজারে বৈঠক নির্ধারণ

বাংলাদেশ সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে একটি বৃহত্তর বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন অংশে অপরাধ কমানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এই অভিযানে সেনা, বিমান, নৌ বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে। এর জন্য সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে, যার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব:)

কমিটি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্দেশ্যে, কক্সবাজারকে সম্ভাব্য মাদক প্রবেশপথ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং সেখানে আগামী ১২ মে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে মাদক পাচার, চোরা চালান এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত বুধবার (২৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই সভায় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রক অধিদফতরের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। বৈঠকে কক্সবাজার এবং তার আশপাশের জেলাগুলোতে মাদকব্যবসা অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল মাদক ব্যবসা এবং চোরা চালান, যা অপরাধমূলক কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, মাদক ব্যবসা বন্ধ করা গেলে অপরাধের হার অনেকটাই কমে যাবে।

একটি উদ্বেগজনক তথ্য হিসেবে জানা গেছে যে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা চলছে ব্যাপকভাবে। বিশেষ করে, ইয়াবা এবং ক্রিস্টাল মেথের মতো মাদকের চোরাচালান রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জমজমাট হয়ে উঠেছে। গত সাত মাসে ৩১টি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোহিঙ্গাদের সাথে বাংলাদেশের চোরাচালানিদের যোগসূত্রে ঘটছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ উখিয়া এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গত চার বছরে মাদক ব্যবসা নিয়ে আটটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০২ জন নিহত হয়েছেন, এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। এই এলাকায় মাদক পাচারের সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের ঘটনা আরও জটিল করেছে পরিস্থিতি। বিশেষ করে, বাংলাদেশের স্থানীয় চক্রের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা অপরাধীরা অস্ত্র সংগ্রহ এবং মাদক পাচার করছে।

গত মার্চ উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি ভয়াবহ সংঘর্ষে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হন। উগ্রপন্থী সংগঠন আরসা এবং আরএসও সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনার পর, স্থানীয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এছাড়া, মাদক ব্যবসা চোরাচালান বন্ধ করার জন্য কক্সবাজারে অবস্থিত বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালানো হবে এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরকারের এই বিশেষ অভিযান, যে যার দায়িত্ব পালন করবে, তা মাদক চোরাচালান এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অপরাধী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য