বিদেশে উচ্চ আয়ের চাকরির প্রলোভনে লিবিয়ায় ২৭ জন বাংলাদেশিকে জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকার মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা জাহিদ হোসেনকে (২৭) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৫। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাতে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সিংগারাপাড়া গ্রামে তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, এই চক্রের ফাঁদে পড়ে নির্যাতনের শিকার হন নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ইয়াকুব আলীসহ আরও ২৬ জন। চক্রের সদস্যরা প্রতারণার মাধ্যমে তাদের দুবাই হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে বন্দি করে নির্মম নির্যাতন চালায় এবং পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে।
র্যাব জানায়, প্রায় দুই বছর আগে ইয়াকুবের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় জাহিদের। নিজেকে ইতালিপ্রবাসী ও ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে জাহিদ তাকে জানান যে, ইতালিতে যাওয়ার মাধ্যমে বড় অঙ্কের আয় করা সম্ভব। এ প্রলোভনে পড়ে ইয়াকুব ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট জাহিদের কথামতো তার চাচা এহরাম সরদার এবং প্রতিবেশী বাবু মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
জাহিদের নির্ধারিত প্যাকেজ অনুযায়ী, ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালিতে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আগাম ৫ লাখ টাকা পরিশোধের পর ২৪ সেপ্টেম্বর ইয়াকুবসহ ২৭ জন দুবাই হয়ে নাইজার ও আলজেরিয়া হয়ে পৌঁছে লিবিয়ায়। আলজেরিয়া পুলিশ তাদের আটক করে ২১ দিন জেল দেয়। মুক্তি পাওয়ার পর চক্রের অন্য সদস্য আবদুল মান্নান ও জাহিদ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
পরবর্তীতে তিউনিশিয়া হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছে একটি বাড়িতে তাদের সবাইকে জিম্মি করে রাখা হয়। সেখানে অমানবিক নির্যাতনের পাশাপাশি বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে পাঠানো হয় স্বজনদের কাছে। দেওয়া হয় হত্যার হুমকি এবং দাবি করা হয় মুক্তিপণ। জীবন বাঁচাতে ইয়াকুবের পরিবারই একাই প্রায় ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ প্রদান করে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মো. খাইরুল বাশারের তত্ত্বাবধানে বন্দিদের উদ্ধার করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফিরে ইয়াকুব ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি মামলা দায়ের করলে র্যাব অভিযানে নামে।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ হোসেন তার অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?