দেশের প্রায় ৮৪.১ শতাংশ শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও স্বীকৃতির বাইরে রয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।
সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিশনের ২৫ দফা সুপারিশের মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসহ সকল শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি প্রদানের সুপারিশ শীর্ষে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, যেগুলোর আইনি সত্তা, পরিপূর্ণ হিসাব বা উৎপাদনের হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে এদের সংখ্যা বেশি। গ্রামে ৮৭.৪ শতাংশ এবং শহরে ৭৪.৫ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। নারী শ্রমিকদের মধ্যে ৯৫.৭ শতাংশ এই খাতের অন্তর্ভুক্ত।
শ্রম সংস্কার কমিশন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে সকল শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ ও আয়ের নিশ্চয়তা এবং শোভন কর্মপরিবেশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য ভাতা প্রদান, তথ্য ভান্ডার তৈরি, পরিচয়পত্র প্রদান ও অবসর ভাতা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অবসরকালীন ভাতা এবং দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্ক ভাতার সুপারিশও করা হয়েছে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি উন্নত নয়। এখনও প্রায় ৫৫টি শিল্প খাত ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর বাইরে রয়েছে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে ৪৭টি শিল্প ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় রয়েছে এবং নতুন করে আরও দুটি শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন মনে করে, দেশের বিশাল সংখ্যক শ্রমিককে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে রাখা শ্রম আইনের দুর্বলতা এবং সরকারের উদাসীনতার পরিচয়। এই শ্রমিকদের আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সকল খাতে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করা জরুরি।
আজ মহান মে দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তবে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে থাকা কোটি কোটি শ্রমিকের জীবনে এই দিবস কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?