বঙ্গোপসাগর ঘিরে আঞ্চলিক শিল্পায়ন ও সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাপানের নেওয়া ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি)’ প্রকল্পে সক্রিয় অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। চলতি মাসের ১৫ মে টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে এ প্রকল্পের অগ্রগতি, বিনিয়োগ সহযোগিতা এবং জ্বালানি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা হবে।
২০১৪ সালে জাপান বিগ-বি প্রকল্প চালু করে। শুরুতে বাংলাদেশকেন্দ্রিক হলেও ২০২৩ সালে এর পরিধি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত করে টোকিও। তবে দিল্লির সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও ঢাকা এই কৌশলগত প্রকল্প থামিয়ে রাখতে চায় না বলে জানিয়েছেন কূটনৈতিক কর্মকর্তারা।
সোমবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে আসন্ন টোকিও বৈঠকের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন। বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জ্বালানি নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সংযোগ এবং সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়সহ সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে বিনিয়োগ বাড়ানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং কানেক্টিভিটি উন্নয়নে সহযোগিতা চাইবে। জাপানের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য এজেন্ডায় থাকবে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি ও মাতারবাড়ী প্রকল্পে অগ্রগতি।
বৈঠকটি দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে—প্রথমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, পরে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আলোচনা। ঢাকা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা বাস্তবতা ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরবে। জাপান চীনসহ তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ব্যাখ্যা করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিগ-বি প্রকল্পের তিনটি স্তম্ভ—শিল্প ও বাণিজ্য, জ্বালানি এবং পরিবহন অবকাঠামো। এর লক্ষ্য বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিল্পায়ন ঘটিয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে সংযোগ স্থাপন। প্রকল্পটির আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র, সড়ক ও রেল অবকাঠামো এবং আঞ্চলিক লজিস্টিক সুবিধা উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
জাপানের সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, “মাতারবাড়ী শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়, বরং আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির কেন্দ্রবিন্দু হবে।”
তবে সাম্প্রতিক চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য এবং জুলাই মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটা সমন্বয় সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কূটনীতিক বলেন, “বিগ-বি কার্যকর করতে হলে ভারতের আস্থা ও অংশগ্রহণ জরুরি, কিন্তু বাস্তবতা এখন কিছুটা জটিল।”
এফওসি বৈঠকে প্রতিরক্ষা, মেরিটাইম নিরাপত্তা, বাণিজ্য, কৃষি, অবকাঠামো, রোহিঙ্গা সংকট এবং মিয়ানমারের পরিস্থিতিও আলোচনা হবে। পাশাপাশি পূর্ববর্তী বৈঠকে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের অগ্রগতিও পর্যালোচনা করা হবে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?