ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রার ‘কপি-পেস্ট’ সালিশি রায় বাতিল করল সিঙ্গাপুর আদালত
সিঙ্গাপুরের আপিল আদালত ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রার নেতৃত্বে প্রদত্ত এক আন্তর্জাতিক সালিশি রায় বাতিলের আদেশ বহাল রেখেছে। কারণ, রায়ের প্রায় অর্ধেক ৪৫১ অনুচ্ছেদের মধ্যে ২১২টি বা ৪৭% হুবহু কপি করা হয়েছিল পূর্বে রচিত অন্য দুটি সালিশি রায় থেকে।
আদালত জানায়, এই ‘কপি-পেস্ট’ পদ্ধতি প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে এবং পক্ষপাত, ন্যায্যতা ও সালিশি প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। প্রধান বিচারপতি সুন্দরেশ মেনন ও বিচারপতি স্টিভেন চংয়ের নেতৃত্বে আপিল আদালত গত ৮ এপ্রিল দেওয়া রায়ে উল্লেখ করেন, “এই রায়টি অত্যন্ত পরিমাণে ‘প্যারালাল অ্যাওয়ার্ড’গুলোকে টেমপ্লেট হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে যুক্তি, চুক্তির ধরণ কিংবা প্রাসঙ্গিক পার্থক্যগুলো বিবেচনা করা হয়নি।”
বিতর্কটি শুরু হয়েছিল ভারতের একটি ফ্রেইট করিডোর ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত একটি বিশেষায়িত সংস্থা এবং তিনটি অবকাঠামোগত কোম্পানির কনসোর্টিয়ামের মধ্যে। মূল প্রশ্ন ছিল—২০১৭ সালের ভারত সরকারের এক বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে সংশোধিত ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর, ওই কনসোর্টিয়াম অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার দাবি করতে পারবে কি না। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হলে, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চেম্বারের (ICC)) বিধিমালায় সিঙ্গাপুরে সালিশি আদালতে গড়ায়। ত্রিপক্ষীয় সালিশি ট্রাইব্যুনালে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি দীপক মিশ্রা এবং সদস্য ছিলেন বিচারপতি কৃষ্ণ কুমার লাহোটি ও বিচারপতি গীতা মিত্তল। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে রায় কনসোর্টিয়ামের পক্ষে যায়।
কিন্তু রায় ঘোষণার পরপরই সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল কমার্শিয়াল কোর্টে তা চ্যালেঞ্জ করা হয়। সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল কমার্শিয়াল কোর্ট এবং পরে দেশটির আপিল আদালত (বিচারপতি সুন্দারেশ মেনন ও স্টিভেন চং-এর নেতৃত্বে) একমত হন যে, এই সালিশি রায় প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের মৌলিক নিয়ম ভঙ্গ করেছে, পক্ষপাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে এবং মামলাটি যথাযথভাবে পুনর্মূল্যায়ন না করে আগের রায়ের উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুর আপিল আদালতের রায়ে প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের তিনটি প্রধান লঙ্ঘনের দিক চিহ্নিত করা হয়েছে, যার ফলে প্রাক্তন ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রার নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সালিশি রায় বাতিল করা হয়। বিচারপতি মিশ্রা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। রায়ে বলা হয়েছে সালিশি ট্রাইব্যুনাল পূর্ববর্তী রায়গুলোকে প্রায় হুবহু টেমপ্লেট হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং তাতে কোনো মৌলিক সংশোধন করেনি। এতে এমন একটি পূর্বনির্ধারিত মানসিকতা বা "prejudgment" এর স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আদালত জানায়, একজন ন্যায্য চিন্তাভাবনাসম্পন্ন পর্যবেক্ষক যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করতে পারেন যে ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খোলা মনে বিবেচনা করেনি।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?