clock ,

অন্তর্বর্তী বাজেটে তরুণদের আশাভঙ্গ

অন্তর্বর্তী বাজেটে তরুণদের আশাভঙ্গ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী বাজেটকে কেন্দ্র করে দেশের তরুণ প্রজন্ম, নাগরিক সমাজ অর্থনীতিবিদদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থানের মূল দাবিগুলোরবৈষম্য হ্রাস, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি সামাজিক ন্যায্যতাপাশ কাটিয়ে বাজেট যেন কেবলদিন পার করারএকটি দলিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তরুণদের প্রত্যাশা ব্যর্থ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া গণঅসন্তোষে উঠে এসেছিল সামাজিক বৈষম্য শিক্ষিত বেকারত্বের বাস্তবতা। দেশে এখনো প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষিত তরুণ বেকার। কিন্তু এবারের বাজেটে তাদের জন্য বাস্তবসম্মত বা সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসংস্থান পরিকল্পনা দৃশ্যমান নয়। এতে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা তৈরি হয়েছে।

কর্মসংস্থান দারিদ্র্য বিমোচন: গুরুত্বপূর্ণ অথচ উপেক্ষিত

গত ছয় মাসে শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন এবং দেশের ৩০ শতাংশ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কাজ বা শিক্ষার বাইরে রয়েছে। অথচ বাজেটে কর্মসংস্থানের জন্য যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছেআত্মকর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র প্রশিক্ষণ প্রকল্পতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল গতানুগতিক।

বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করলেও বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কোনও কার্যকর কৌশল উপস্থাপন করা হয়নি।

সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা স্বাস্থ্য: বরাদ্দে কোনো ভিন্নতা নেই

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কিছু ভাতার পরিমাণ সামান্য বাড়ানো হলেও প্রকল্প সংখ্যা কমানো হয়েছে। টিসিবির বাদ পড়া ৪৩ লাখ পরিবার কীভাবে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত হবে, সে বিষয়ে স্পষ্টতা নেই। শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়নি; বরাদ্দের ধরন আগের মতোই।

করমুক্ত আয়সীমা চাকরিজীবীদের বৈষম্য

ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা কার্যকর হবে পরের অর্থবছর থেকে। বিশ্লেষকদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবতা বিবর্জিত। এর বিপরীতে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বেতন-ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে, যা প্রায় ১৫ লাখ কর্মীর জন্য সুবিধাজনক হলেও বেসরকারি খাত বা সাধারণ নাগরিকদের জন্য নয়।

বৈষম্যহীন অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ

বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম ছিলবৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’, কিন্তু বাস্তবে সেই দিকনির্দেশনার ঘাটতি স্পষ্ট। বিপরীতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে, যা সৎ করদাতাদের প্রতি বৈষম্যমূলক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাজেট বক্তৃতা মাত্র ৬৬ পৃষ্ঠার হলেও তাতে মূলত পুরনো কর্মসূচির পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে।

বিনিয়োগ বাণিজ্য: ঘোষণার বেশি, পদক্ষেপ কম

বেসরকারি বিনিয়োগে গতি ফেরাতে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিনিয়োগ সম্মেলন বা নাসার সঙ্গে মহাকাশ গবেষণার চুক্তি উল্লেখ করা হলেও এগুলোর সরাসরি প্রভাব নিয়ে আছে সংশয়। আমদানিতে শুল্ক ছাড় বাণিজ্য উদারীকরণের পদক্ষেপ এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী প্রস্তুতির অংশ হলেও রপ্তানিকারকদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো সহায়তা নেই।

ব্যয় কাঠামো: উন্নয়নের চেয়ে প্রশাসনিক ব্যয়

বাজেটের আকার লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় এবং মাত্র লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়। জিডিপির তুলনায় বাজেট ঘাটতি . শতাংশ ধরা হলেও, তা পূরণের বাস্তব ভিত্তি দুর্বল। সরকার বলছে, তারা প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে সামগ্রিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাই বাজেট ছোট রাখা হয়েছে। কিন্তু এই ব্যাখ্যা অনেকের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি।


বাজেট বক্তব্যে যেবৈষম্যহীন অর্থনীতিরস্বপ্ন দেখানো হয়েছে, বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক দূরে। তরুণ বেকার সমস্যা, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পদক্ষেপের অভাব এবং কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ এই বাজেটকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে। অর্থনীতিবিদ বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটিস্থিতি রক্ষাবাজেট, যা দেশের বাস্তব সংকট মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়।

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

সম্পর্কিত খবর

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য